স্বামী-স্ত্রীর
মধ্যে বিচ্ছেদে বা তালাকের অন্যতম যে কারণটি বলতে দেখা যায়, তা হলো বনিবনা
না হওয়া। অনেকে এটাকে লেখেন ‘মনের অমিল’। স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না
হলে বা মনের অমিল হলে নিজেরা পৃথক থাকতে পারেন অথবা বিচ্ছেদ নিতেই পারেন।
আইন এটা সমর্থন করে।
কেন হয় না বনিবনা
কেন হয় না বনিবনা
বিভিন্ন কারণে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা নাও হতে পারে।
বিচ্ছেদসংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নিজেদের মধ্যে
বনিবনা না হওয়ার অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে বোঝাপড়ার অভাব, নিজেদের ভালো–মন্দে
অন্য কারও হস্তক্ষেপ, শারীরিক অক্ষমতা এবং ব্যক্তিত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব। অনেক
সময় শুনতে খারাপ লাগলেও দেখা যায়, সংসার শুরু করা মাত্র নিজেদের
আত্মীয়স্বজন হস্তক্ষেপ শুরু করেন। এ নিয়ে নিজেদের মনের অমিল তুঙ্গে ওঠে।
দুই পক্ষের মধ্যে বিয়ের সময় দেওয়া, বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি
দেওয়া–নেওয়া নিয়েও যেন একধরনের স্নায়ুযুদ্ধ চলে। কিছুদিন আগে সদ্য বিয়ে করা
এক দম্পতির বিচ্ছেদের মামলা করতে গিয়ে দেখা গেল, তাঁরা নিজেদের সংসারে
সুখের জন্য তিল পরিমাণ ছাড় দিতেও রাজি নন। দুজনেই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু
নিজেদের মধ্যে যেন অর্থনৈতিক এক অনিশ্চয়তা। নিজেদের সংসারে নিজেরা এক তিল
খরচও করবেন না। স্বামী বলেন, দুজন মিলেই সংসারের খরচ জোগাবেন। স্ত্রী বলেন,
সংসারের সব দায়দায়িত্ব শুধু স্বামীর। আবার এ নিয়ে মাথা ঘামানো শুরু করেছেন
নিজের বাবা–মায়েরা। মেয়ের বাবা–মায়ের কথা, তাঁরা মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন
নিজেদের সঙ্গে থাকার জন্য। তাঁরা মেয়ের কাছ থেকে আলাদা থাকতে পারবেন না।
থাকলে মেয়ের জামাই তাঁদের সঙ্গেই থাকবেন। এ রকম নানা কারণে স্বামী–স্ত্রীর
মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা দেখা দিচ্ছে। অনেক সময় বিচ্ছেদের কারণও এগুলো।
তালাকই সমাধান নয়
স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কোনো কারণে বনিবনা না হলে বা মনের
অমিল হলে অনেকেই একত্রে থাকতে চান না। কেউ আইনসম্মতভাবে বিয়ের অবসান ঘটাতে
চান আবার অনেকে তালাক না দিয়েও আলাদা বসবাস করতে চান। তবে তালাকের মতো
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আলাদা
বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মুসলিম আইনে স্পষ্ট করে আলাদা বসবাস করার
কোনো বিষয় সরাসরি বলা নেই, তবে হিন্দু আইনে তা স্পষ্ট করা আছে। বাংলাদেশে
হিন্দুরা বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারে না, তবে আলাদা থাকতে পারে। মুসলমান
সম্প্রদায়ের দুজন সম্মতিতে আলাদা থাকতে চাইলে কী হবে, তা স্পষ্ট করা না
থাকলেও এতে কোনো বাধা তৈরিও করেনি। এ জন্য আদালতে না গিয়ে নিজেরা সমঝোতার
মাধ্যমে আলাদা থাকতে পারেন এবং প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে চুক্তিনামাও তৈরি
করে নিতে পারেন।
পারস্পরিক অধিকার
স্বামী–স্ত্রী আলাদা বসবাস করতে গেলেও স্বামী বা স্ত্রী
হিসেবে তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক কিছু আইনসম্মত অধিকার কিন্তু বলবৎ থাকে।
স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে বিয়ে বর্তমান থাকা অবস্থায় ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার
লাভ করেন। আলাদা বসবাস করলেও সন্তান থাকলে তাঁদের অধিকারের দিকেও নজর দিতে
হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আলাদা থাকা মানেই কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক
নয়। তাই নিজেরা যদি পুনরায় একত্রে থাকতে চান, তাহলে কোনো বাধা নেই। আর
তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে চাইলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী তা করতে হবে। তবে
নিজেদের মধ্যে আলাপ–আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করে নেওয়াই উচিত।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
আইন অধিকার স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা হয় না,তালাকই সমাধান নয়
Reviewed by getideaa2z
on
7:33 PM
Rating:
No comments:
Post a Comment